প্রকাশিত: ০৪/০৩/২০১৭ ৮:৪৯ এএম

হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
কক্সবাজারের রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সবুজ বনাঞ্চল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট এবং বনজসম্পদ নির্বিচারে ধ্বংস করতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা তৎপরতা আরম্ভ করেছে। ইতোমধ্যে বিশালকার একটি সিন্ডিকেট বনদস্যুদের মাধ্যমে কাঠ পাচারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বাঁঘখালী ও লামা বনবিভাগের সাঙ্গু রেঞ্জের রিজার্ভ এলাকা থেকে কাঠ সংগ্রহ করে নানা প্রান্তে মজুদ করছে আর রাঁতের আধারে বাইশারী বাজার হয়ে গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে পাচার করছে। তাছাড়া রামুর ব্যঙডেবা সামাজিক বনায়ন থেকেও অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, কাঠ পাচারের কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মূখে পড়ছে। এক সময় রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সবুজ বন-বনানী, পশু-পাখির হাক ডাকে মূখরিত ছিল। পাখির ডাকে ভোর সকালে ঘুম ভাঙ্গাতো পল্লীগ্রামের মানুষের। আজ সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে। এখন মধ্যরাতেই কাঠবোঝায় জীপ গাড়ির বিকট শব্দে গ্রামের মানুষ জেগে উঠছে। ভারসাম্য হরাচ্ছে এই অঞ্চলের প্রকৃতি। দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অনুজীব ইত্যাদিকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে বনজসম্পদ উজাড় অব্যাহত থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। কারণ জড় পরিবেশের উপরই জৈবিক পরিবেশ ওতপ্রোতভাবে নির্ভরশীল। একটি হারিয়ে গেলে অন্যটি ভাল থাকার পথ নেই। এ অত্যাবশ্যকীয় সম্পৃক্ততা সামাজিক পরিবেশ ও রাসায়নিক পরিবেশের’ও বিঘœ ঘটায়। তাই পরিবেশবীদরা এ জন্য নির্বিচারে পাহাড়কাটা এবং তামাক চাষকেই দায়ি করছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, একটি সংঘবদ্ধ অবৈধ কাঠ পাচারকারী চক্র বাইশারী ইউনিয়নের উত্তর ও পূর্ব বাইশারীর রিজার্ভ এলাকা থেকে কাঠ কেটে স্থানীয় বনবিভাগের পাশাপাশি কথিত প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে পাচার কাজ চালিয় যাচ্ছে। পাচার কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ জীপ গাড়ি। প্রতিরাতে বাইশারী বাজার হয়ে গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তামাকচুল্লিগুলোতে পুড়ানোর জন্য ১৫ থেকে ২০ গাড়ি কাঠ নির্বিঘেœ যাচ্ছে। এসবের পাশাপাশি অবৈধ গোল কাঠসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ পিকআপ গাড়িযোগে গর্জনিয়া-উখিয়ারঘোনা সড়ক হয়ে পাচার হচ্ছে।

বনসংরক্ষন বিধিমালা ২০১১ অনুয়ায়ী, ফলজ বৃক্ষ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন বা অন্য যে কোন ধরণের গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করে অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে কাঠ পরিবহনের জন্য বনবিভাগের রুট পারমিট নেওয়ার বিধান থাকলেও তা কেউ মানছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠ পাচারকারী চক্রের এক সদস্য বলেন, বনবিভাগ ও এলাকার কিছু মহলকে ম্যানেজ করে তারা কাঠ পাচার অব্যাহত রেখেছেন। বাইশারী হয়ে এসব কাঠ গর্জনিয়ায় পৌঁছাতে সংশ্লিষ্টদের মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়।

অন্যদিকে বাইশারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ইউনিয়নে চারটি অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব করত কলই বনাঞ্চল ধ্বংসের মূল। রিজার্ভ বনের সেগুন, গর্জন, গামারি, জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ ঘনফুট গাছ চিরাই করে আর মজুদ রাখে।

এ ব্যাপারে লামা বনবিভাগের (নাইক্ষ্যংছড়ি ও সাঙ্গু উভয় রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম হারুন-উর-রশিদ বলেন, কাঠ পাচার হচ্ছে এটি সত্য। কেউ কেউ গায়ের জোরে এসব করছে। তবে বনবিভাগের জনবল কম থাকায় আমরা কষ্টে আছি। কাঠ পাচার বন্ধে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, বনাঞ্চল রক্ষা করার জন্য প্রশাসন খুবই আন্তরিক। বাইশারী থেকে কাঠ পাচার বন্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অতি দ্রুত গ্রহণ করা হবে। অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ হলেই বিষাক্ত তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বনদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গর্জনিয়া ইউনিয়নে যেন অবৈধ কাঠ প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

###

পাঠকের মতামত

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক নারীর পা বিচ্ছিন্ন

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি :: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের নিকুছড়ি সীমান্তে মর্মান্তিক মাইন বিস্ফোরণের ...

কক্সবাজারে দুর্ঘটনার পর ট্রেন আটকে বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি গঠন

কক্সবাজারের রামুতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার পাঁচজন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে ...

ইউএনওর ‘স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ’, পদ হারালেন জামায়াত নেতা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপজেলা জামায়াতের ...